Header Ads Widget

কোরআন অবমাননার শাস্তি কি?

বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে পরিচিত। বহু বছর ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে মুসলমানরা শান্তিপূর্ণভাবে এ দেশে বসবাস করে আসছে। ছোট খাট দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়ে থাকলেও শান্তিপূর্ণ পন্থায় সমাধানের পথও খুঁজে বের করেছে তারা। 



বিশ্বের যেকোনো দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার স্বার্থে মুসলমানদের ধর্ম, ধর্মীয় গ্রন্থ, তাদের নবী ও সাহাবিদের সম্মান রক্ষার্থে কঠোর আইন তৈরি করা অত্যাবশ্যক। অন্যথায় কেউ এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটালে মুসলমানদের মধ্যে রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে ও ক্রোধে ফেটে পড়ে। শুরু হবে যাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা। তৈরি হবে মারামারি-হানাহানির মতো ঘৃণিত ঘটনার। বিপর্যস্ত হবে পড়বে মানবতা, ডেকে আনতে পাড়ে ভয়াবহ বিপর্যয়। 


নবী (সা.) ও ধর্ম অবমাননাকারীর শাস্তি সম্পর্ক 

আল্লহ তায়ালা কোরআনুল কারিমে বলেন, 


اِنَّ الَّذِیۡنَ یُؤۡذُوۡنَ اللّٰہَ  وَ رَسُوۡلَہٗ  لَعَنَہُمُ  اللّٰہُ  فِی الدُّنۡیَا وَ الۡاٰخِرَۃِ  وَ اَعَدَّ لَہُمۡ  عَذَابًا مُّہِیۡنًا ﴿۵۷﴾

ইন্নাল্লাযীনা ইউ’যূ নাল্লা-হা ওয়া রাছূলাহূলা‘আনাহুমল্লা-হুফিদ্দুনইয়া-ওয়াল আ-খিরাতি ওয়া আ‘আদ্দা লাহুম ‘আযা-বাম মুহীনা-।

যারা আল্লাহ ও রাসূলকে পীড়া দেয়, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত করেন এবং তিনি তাদের জন্য রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি (সুরা আহজাব-৫৭)। 

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন-

তুমি যদি তাদের জিজ্ঞেস করো, তবে তারা অবশ্যই বলবে, আমরা তো হাসি-তামাশা ও ফুর্তি করছিলাম। বলো, তোমরা কি আল্লাহ, আল্লাহর আয়াত ও তাঁর রাসুলকে নিয়ে ফুর্তি করছিলে? (সুরা তাওবা-৬৫)। 


অন্য আর এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

لَا تَعۡتَذِرُوۡا قَدۡ کَفَرۡتُمۡ  بَعۡدَ  اِیۡمَانِکُمۡ ؕ اِنۡ نَّعۡفُ عَنۡ طَآئِفَۃٍ مِّنۡکُمۡ نُعَذِّبۡ طَآئِفَۃًۢ  بِاَنَّہُمۡ  کَانُوۡا  مُجۡرِمِیۡنَ ﴿٪۶۶﴾

লা- তা‘তাযিরূকাদ কাফারতুম বা‘দা ঈমা-নিকুম ইন না‘ফু‘আন তাইফাতিম মিনকুম নুআ‘যযিব তাইফাতাম বিআন্নাহুম কা-নূমুজরিমীন।

তোমরা এখন অজুহাত দেখিয়োনা, তোমরাতো ঈমান আনার পর কুফরী করেছ, যদিও আমি তোমাদের মধ্য হতে কতককে ক্ষমা করে দিই, তবুও কতককে শাস্তি দিবই। কারণ তারা অপরাধী ছিল (সুরা তাওবা-৬৬) 


অপরাধ করর কেউ যদি আল্লাহ তায়ালার নিকট লজ্জিত হয় অর্থাৎ মোনাফিকদের মধ্যে যারা তাওবা করবে, তাদের ক্ষমা করা হবে। আর যারা তাওবা করবে না, তারা অবশ্যই শাস্তিপ্রাপ্ত হবে।



যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের বিরুদ্ধে কথা বলে বা এমন কাজ করে তাদের সম্বন্ধে আল্লাহ তায়ালা আরো জানিয়েছেন, 


اَلَمۡ یَعۡلَمُوۡۤا اَنَّہٗ مَنۡ یُّحَادِدِ اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ  فَاَنَّ لَہٗ  نَارَ جَہَنَّمَ خَالِدًا فِیۡہَا ؕ ذٰلِکَ  الۡخِزۡیُ  الۡعَظِیۡمُ ﴿۶۳﴾

আলাম ইয়া‘লামূআন্নাহূমাইঁ ইউহা-দিদিল্লা-হা ওয়া রাছূলাহূফাআন্না লাহূনা-রা জাহান্নামা খা-লিদান ফীহা- যা-লিকাল খিঝইউল ‘আজীম।

তারা কি জানেনা যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের যারা বিরুদ্ধাচরণ করে, এমন লোকের ভাগ্যে রয়েছে জাহান্নামের আগুন? তারা তাতে অনন্তকাল থাকবে, এটা হচ্ছে চরম লাঞ্ছনা (তাওবা-৬৩) 


আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, 

وَ مَنۡ یُّشَاقِقِ الرَّسُوۡلَ مِنۡۢ بَعۡدِ مَا تَبَیَّنَ لَہُ الۡہُدٰی وَ یَتَّبِعۡ غَیۡرَ  سَبِیۡلِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ نُوَلِّہٖ مَا تَوَلّٰی وَ نُصۡلِہٖ جَہَنَّمَ ؕ وَ سَآءَتۡ مَصِیۡرًا ﴿۱۱۵﴾٪

ওয়া মাইঁ ইউশাকিকিররাছূলা মিম বা‘দি মা-তাবাইইয়ানা লাহুল হুদা-ওয়া ইয়াত্তাবি‘ গাইরা ছাবীলিল মু’মিনীনা নুওয়ালিল হী মা-তাওয়াল্লা-ওয়ানুসলিহী জাহান্নামা ওয়া ছাআত মাসীরা-।

আর সুপথ প্রকাশিত হওয়ার পর যে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং বিশ্বাসীগণের বিপরীত পথের অনুগামী হয়, তাহলে সে যাতে অভিনিবিষ্ট আমি তাকে তাতেই প্রত্যাবর্তিত করাব এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব; এবং ওটা নিকৃষ্টতর প্রত্যাবর্তন স্থল (নিসা-১১৫) 


নবী (সা.) ও ধর্ম অবমাননার শাস্তি নিয়ে হাদিসে নবী করিম সাঃ কি জানিয়ে দিয়েছেন, 


আবু রাফে নামের এক ইহুদিকে রাসুল (সা.) এ জন্যই হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন, সে রাসুল (সা.)-এর বিরুদ্ধে সব সময় কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করত। আল্লামা ইবনে কাছির (রহ.) আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে ইমাম বোখারি (রহ.)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন- রাসুল (সা.) আবু রাফেকে হত্যা করার জন্য বেশ কজন আনসারি সাহাবিকে নির্বাচিত করলেন এবং হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আতিককে তাঁদের দলপতি নিয়োগ করলেন। আবু রাফে রাসুল (সা.)-কে কষ্ট দিত এবং এ কাজে অন্যদের সাহায্য করত। 


অন্য এক হাদিসে 

হজরত ইকরামা (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত আলী (রা.)-এর খিদমতে কয়েকজন জিনদিককে (ধর্মদ্রোহী) উপস্থিত করা হলে তিনি তাদের আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেন। এ খবর হজরত ইবনে আব্বাস (রা.)-এর কাছে পৌঁছলে তিনি বলেন, আমি হলে তাদের আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিতাম না। রাসুল (সা.)-এর নিষেধ থাকার কারণে। তিনি বলেন, তোমরা আল্লাহর শাস্তি দ্বারা কাউকে শাস্তি দিও না। তবে অবশ্যই আমি তাদের হত্যা করতাম। কারণ রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি স্বীয় ধর্ম ইসলাম ত্যাগ করবে তাকে হত্যা করো। (বোখারি, জামউল ফাওয়ায়েদ ১/৪৮৪) 


ওই সব মোনাফেককে বলা হয় জিনদিক , যারা রাসুল (সা.)-এর জামানার পরে কিয়ামত পর্যন্ত লোক দেখানো নিজেকে মুসলমান প্রকাশ করবে; কিন্তু তার অন্তরে থাকবে না ইমানের বিন্দুমাত্র। 


এক বর্ণনায় জানা যায়,

মুজাহিদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হজরত ওমর (রা.)-এর দরবারে এমন এক ব্যক্তিকে আনা হলো, যে রাসুল (সা.)-কে গালি দিয়েছে। হজরত ওমর (রা.) তাকে হত্যা করেন। অতঃপর বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা বা কোনো নবীকে গালি দেবে তোমরা তাকে হত্যা করো। (আসসারিমুল মাসলুল-৪/৪১৯) 


নবী (সা.) ও ধর্ম অবমাননাকারীর শাস্তির ব্যাপারে ফকিহগণের মতামত 


নবী করিম (সা.)-এর অবমাননাকারীর শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদণ্ড। এ ব্যাপারে উম্মতের ইজমা (ঐকমত্য) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। 


খুলাসাতুল ফতাওয়া গ্রন্থে আল্লামা তাহের বোখারি (রহ.) লিখেন, মুহিত নামক কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-কে গালি দেয় বা নবী করিম (সা.)-এর ধর্মীয় কর্মকাণ্ড নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে বা তাঁর ব্যক্তিত্ব নিয়ে সমালোচনা করে, তাঁর কোনো বৈশিষ্ট্য নিয়ে দোষত্রুটি চর্চা করে, সে ব্যক্তি নবীর উম্মত হোক বা অন্য কোনো নবীর উম্মত, মুসলিম রাষ্ট্রে আশ্রিত কাফের হোক বা শত্রু কাফের, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ, গালি, অবমাননাকর মন্তব্য, বক্তব্য ইচ্ছাকৃতভাবে হোক বা অনিচ্ছায়, বুঝে-শুনে হোক বা অসাবধানতাবশত- সর্বাবস্থায় সে চিরস্থায়ী কাফির বলে সাব্যস্ত হবে। তার এই অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য বলে ধার্য হবে- এপার-ওপার উভয় আদালতে। 


নবী করিম (সা.)-এর সমালোচনাকারী, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপকারী, ইসলাম ধর্ম ত্যাগকারী সাধারণ মুরতাদের মতো নয়, যে ধর্ম ত্যাগ করল সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হলো। অন্য কারো জন্য ক্ষতিকারক নয়। এ কারণে সে তাওবা করলে তা গ্রহণযোগ্য ও সাজা মাফ হওয়ার অবকাশ রয়েছে। তবে যে ব্যক্তি নবী (সা.)-এর শানে বেয়াদবি করবে, সমালোচনা করবে, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করবে, সে সাধারণ অপরাধী নয়, সে তো বিশ্বমানবতার শান্তির দূত রাহমাতুললিল আলামিনের সঙ্গে বেয়াদবি করেছে, যা গোটা মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধের শামিল। তাই তার অপরাধ ক্ষমাযোগ্য নয়। 


আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) উল্লেখ করেন, সব মাজহাবের ঐকমত্যে সিদ্ধান্ত- নবী করিম (সা.)-এর অবমাননাকারী কাফির ও তার শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদণ্ডই। 


আল্লামা ইবনে মুনজির (রহ.) বলেন, সর্বস্তরের উলামায়ে কেরামের ঐকমত্য হলো, নবী করিম (সা.)-এর অবমাননাকারীর শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদণ্ড। 


ইমাম আবু বকর আল ফারেস (রহ.) বলেন, সব মুসলমানের ঐকমত্য হলো- নবীর অবমাননাকারীর শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই। 


কাজি আয়াজ (রহ.) বলেন, গোটা উম্মতের ঐকমত্যে সিদ্ধান্ত হলো, কোনো ব্যক্তি যদি নবীর শানে বেয়াদবি করে, ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে, গালি দেয় তাকে অবশ্যই মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। 


আল্লামা খাত্তাবি (রহ.) বলেন, নবী (সা.)-এর অবমাননাকারীর শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই, এ ব্যাপারে কেউ দ্বিমত করেছেন বলে আমার জানা নেই। 


ওপরে উল্লিখিত কোরআন ও হাদিস, ফুকাহাগণের মতামত থেকে এ কথা স্পষ্ট বুঝা যায় যে- 


- রাসুল (সা.)-এর শানে বেয়াদবিমূলক মন্তব্য, বক্তব্য বা তাঁর প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রূপকারী এবং ধর্মীয় কোনো বিধান নিয়ে ব্যঙ্গকারী উম্মতের সর্বোচ্চ ঐকমত্যে মুরতাদ বলে সাব্যস্ত হবে। 


- তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই হতে হবে। 


-ঃমৃত্যুদণ্ড প্রদানের দায়িত্ব থাকবে শাসকদেরই হাতে। 


- তাই শাসকদের জন্য আবশ্যক হয়ে পড়ে এ ধরনের লোকদের চিহ্নিত করে আইনের মাধ্যমে তাদের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা। উল্লেখ্য, সাধারণ মুসলমানদের জন্য এ ক্ষেত্রে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ