অনেক খামারি ভাই এই সমস্যার কারন এবং সমাধান কোনোটাই খুঁজে না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন।
ইনকিউবেটরে বাচ্চা ফুটাতে গেলে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাটির সম্মুখীন হতে হয় তা হচ্ছে ডিমের ভিতরে বাচ্চার মৃত্যু।
ইনকিউবেটরের ডিজাইনে কি এমন ত্রুটি থাকতে পারে যার ফলে এই সমস্যা হয়, আজকে সেই বিষয় নিয়েই আলোচনা করবো।
যেহেতু ইনকিউবেটর ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর মেশিন তাই স্বাভাবিক ভাবে বোঝা যাচ্ছে ইনকিউবেটরে যতটি ডিমের ধারন ক্ষমতা, ততটি ডিম ইনকিউবেটরে দিলে সবগুলোই ডিমেই ফুটবে কারন ডিম ফুটানোর মূল নিয়ম গুলো অনুসরণ করে তা সঠিক নিয়মে একসাথে অনেক গুলো ডিম ফুটানোর মেশিনের নাম হচ্ছে ইনকিউবেটর।
ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর কয়েকটি মূল নিয়ম হচ্ছেঃ
১. তাপমাত্রা সঠিক রাখা
২. আর্দ্রতা সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা
৩. সঠিক পরিমাণে ধীরে ধীরে ডিম ঘুরিয়ে দেয়া।
৪. এবং ডিমে পর্যাপ্ত অক্সিজেন প্রবাহের ব্যবস্থা রাখা।
উপরেত চারটা বিষয় উর্বর ডিম গুলোকে সঠিক রাখতে সাহায্য করে, তাই সব গুলো ডিমই ফুটে বের হতে সাহায্য করে।
এখন জানবো ইনকিউবেটরে ডিমের ভিতরে বাচ্চা কেন মারা যায়ঃ
ইনকিউবেটরে যদি ডিমের ভিতরে বাচ্চা মারা যায় তখন বুঝতে হবে ঐ ডিমে উপরউক্ত বিষয় গুলি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়নি।
যে ডিম গুলোর ভিতরে বাচ্চা মারা যায় পরবর্তীতে সেই ডিম গুলো ভেঙ্গে দেখা যায় বেশিরভাগ বাচ্চা হেচিংএর ৪/৫দিন আগে ডিমের ভিতর মারা গেছে, এর বেশ কিছু কারন রয়েছে যে গুলো জানা থাকলে সমস্যা গুলো এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।
এই সমস্যার প্রধান কারণ গুলো হচ্ছেঃ
ক. হেচিংএর আগে বাচ্চার ঠোঁট ডিমের সরু দিকে (উল্টো দিকে থাকা)।
খ. ডিমের ভিতরে বাচ্চার ঠোঁট যদি সঠিক স্থানে না থাকে তাহলে সেই বাচ্চা হেচিংএর আগেই ডিমের ভিতর মারা যেতেপারে।
গ. কিছু বাচ্চা ফুটার সময় ডিমের ভিতর থেকে পানি বের হয়, এই সমস্যাটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাচ্চার ঠোঁট উল্টো দিকে থাকার ফলে হয়।
ডিমের ভিতরে বাচ্চার ঠোঁট উল্টো দিকে থাকলে তখন আসলে এই সমস্যা সমাধানের কোনো কার্যকারী উপায় থাকেনা তবে এই সমস্যাকে সচেতনতার সহিত এড়িয়ে যাওয়া সম্বব।
সমাধানরঃ
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইনকিউবেটরে ডিম সঠিক ভাবে রাখতে না পারলে এই সমস্যা হয়, যেমন ডিমে মোটা মাথা অপেক্ষা সরু মাথা উঁচুতে থাকলে এই ধরনের সমস্যার সম্ভবনা বেশি থাকে,
সেই কারনে ইনকিউবেটরে ডিম সঠিকভাবে রাখতে সেটার ট্রে ব্যবহার করা হয়, সেটার ট্রের ফ্রেমে ডিম গুলো সঠিকভাবে আটকে রাখা হয়,
কিন্তু সেটার ট্রে তে ডিম থাকা অবস্থায় ডিম গুলো ঘুরাতে হলে পুরো ডিমের সারি বা ট্রে কেই ৪৫ডিগ্রি কোনো ঘুরিয়ে ফেলতে হবে,
কিন্তু অনেক খামারি ভাইয়ের মেনুয়েল ইনকিউবেটর রয়েছে যাদের ইনকিউবেটেরে ডিম হাত দিয়ে নাড়া দিয়ে ডিম ঘুরানোর কাজ সম্পূর্ণ করতে হয়, তাদেরকে ডিম ঘুরানোরসময় একটা বিষয় লক্ষ রাখতে হবে তা হচ্ছে কোনো ভাবেই যেনো ডিমের সরু মাথা উপর দিকে না থাকে,তাহলে এই ধরনের সমস্যা হবার সম্ভবনা কম থাকবে,
এই সমস্যা সমাধানের কার্যকারি একটি উপায় হচ্ছে ডিমের উপর দাগ দিয়ে চিহ্নিত করে রেখে ডিম হাতে ঘুরানো, এতে ডিম উপরের দাগটা সবসময় ৪৫ডিগ্রি এদিক ওদিক রাখতে হবে।
হেচিং এর সময় বার বার ওভার ট্যম্পারেচার হওয়া।
আমরা জানি হেচিং এর সময় ইনকিউবেটরের তাপমাত্রা একটু কমে দিতে হয়, কিন্তু এই তাপমাত্রা কেনো কমাতে হয়ে সেটা আমরা অনেকেই জানিনা,
ইনকিউবেটর ডিমে সঠিক তাপমাত্রা রাখা হয়, ইনকিউবেটর কত ডিগ্রি তাপমাত্রা সেট করতে হবে সেটা ট্যম্পরেচার সেন্সর স্থাপনের স্থান থেকে ডিমের দুরুত্ব এবং হিটারে দুরুত্ব এবং হিটারের ওয়ের্টের উপর নির্ভর করে।
হেচিংএর সময় ডিমের ভিতরে বাচ্চা পরিপূর্ণ থাকার কারনে বাচ্চার শরীরে তাপ উৎপন্ন হয় এবং এই তাপই অতিরিক্ত তাপে রুপান্তরিত হয়, যেহেতু হেচিং এর সময় ডিমই একটা তাপের উৎস হয় এবং ডিম থেকে ট্যম্পরেচার সেন্সর একটু দুরে থাকে তাই ইনকিউবেটরে সেটরের মত ৩৭.৭ডিঃসেঃ তাপমাত্রা থাকে তাহলে ডিমের কাছে আরো বেশি তামাত্রা থাকবে সেই কারনে হেচিংএর সময় ইনকিউবেটরে তাপমাত্রা একটু কমিয়ে দেয়া হয় যাতে ডিমের তাপমাত্রা সঠিক,এবং নিয়ন্ত্রিত থাকে।
কিন্তু কন্ট্রোলারে তাপমাত্রা কম সেট করলেও ইনকিউবেটরে তাপমাত্রা বেড়ে যায় আর এর ফলে ডিমের ভিতর বাচ্চা অতিরিক্ত তাপে মারা যায়।
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সমস্যার সমাধানঃ
ইনকিউবেটরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনের জন্য একটা নিদৃষ্ট সময় পর পর ডিমে বাতাস প্রবাহিত করতে হবে, এবং ইনকিউবেটরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
ডিমের ভিতরে বাচ্চা মৃতুর আরো একটা কারন হচ্ছে হেচিংএর সময় CO² বা কার্বনডাইঅক্সাইড নিয়ন্ত্রনে না রাখা,
কার্বনডাইঅক্সাইড সমস্যার সমাধান।
যেহেতু ইনকিউবেটর কন্ট্রোলারে কার্বনডাইঅক্সাইড সেন্সর তেমন ব্যবহার করা হয় না, তাই এটা নিয়ন্ত্রনের অন্য উপায় হচ্ছে, ইনকিউবেটরের বাহিরের বাতাস ভিতরে ঢুকানো,কারন আমারে চারপাশের বাতাসে অক্সিজেনের পরিমান বেশি।
তাই ইনকিউবেটরে একটা নিদৃষ্ট সময় পর পর বাহিরের বাতাস ভিতরে ঢুকানো হলে কার্বনডাইঅক্সাইড নিয়ন্ত্রনে থাকবে,
ইকিউবেটরে ডিমের ভিতর বাচ্চা মৃত্যুর অন্যতম কারন, অনিয়ন্ত্রিত আদ্রতাঃ
আমাদের নদীমাতৃক বাংলাদেশে বেশির ভাগ সময় বাতাসের আদ্রতা বেশি থাকে, ডিমের ভিতরে যে তরল থাকে সেটা সঠিক সময় সঠিক পরিমানে শুকানোর জন্য ইনকিউবেটর সঠিক তাপমাত্রা এবং সঠিক আদ্রতা বজায় রাখতে হয়, তাপে ডিমের ভিতরের তরল বাস্পে রুপান্তরিত হয় যার ফলে ভ্রুন বড় হবার সাথে ডিমও সঠিক পরিমানে শুকায়, ডিম সঠিক পরিমান শুকানোর জন্য ইনকিউবেটরে আদর্শ তাপমাত্রা হচ্ছে সেটারে ৫৫% হেচারে ৭৫%-৮০%।
কিন্তু আমার দেশে বেশিরভাগ সময় বাহিরে ৭০%এর কাছাকাছি আর্দ্রতা থাকে যে সেটারের জন্য আদর্শ নয় সেই কারনে হেচিংএর সময় কিছু বাচ্চা ডিমের ভিতরে মারা যেতে পারে।
অনিয়ন্ত্রিত আদ্রতা সমস্যার সমাধানঃ
ডিম সেটারে থাকাকালিন ইনকিউবেটরের ভিতর থেকে সুমস্ত পানি সরিয়ে ফেলুন, যেহেতু তাপমাত্রার তারতম্য সৃষ্টি করলে সেটা আর্দ্রতার উপর প্রভাব ফেলে তাই একটা নিদৃষ্ট সময় পর পর ইনকিউবেটরের ভিতরের বাতাস ফ্যনের সাহয্যে বাহিরে বের করে দিবেন এতে বাহিরের কম তাপমাত্রার বাতাস ইনকিউবেটরের ভিতরে ঢুকবে যার ফলে আর্দ্রতা কমবে।
ইনকিউবেটরের ভিতরে আদ্রতা কমানোর জন্য ইনকিউবেটরের ভিতর থেকে পানি সরিয়ে ফেলে ১০%থেকে ১৫%কমাতে পারলেও অনেক ভালো হেচিংরেট পাওয়া সম্ভব।
ইনকিউবেটর ডিমের ভিতরে বাচ্চা আটকে যাবার আরো একটি কারন হেচিংএর সময় আদ্রতা কম থাকা, হেচিংএর সময় আদ্রতা খুব কম থাকলে ডিমের সাথে বাচ্চার শরীর আটকে যায়।
সমস্যার সমাধানঃ
হেচিংএর সময় আদ্রতা বাড়ানোর সহজ উপায় ইনকিউবেটরের ভিতরে যে কোনো ফ্যনের বাতাসের কাছে একটা পাত্রে পানি বা ভিজা কাপড় রাখা।
ভিজা কাপড় শুকিয়ে যাবে এতে সেই কাপড়ের পানি বাতাসে মিশে বাতাস আদ্র হবে।
এছাড়া ৩৭ডিঃসেঃ তাপমাত্রা রয়েছে এমন পানিতে একটা কাপড় ভিজিয়ে সেই ভিজা কাপড় দিয়ে ডিম মুছে দিলে ইনকিউবেটরে আর্দ্রতা বেড়ে যাবে।
0 মন্তব্যসমূহ