মুরগীর চিকিৎসায় তুলসী গাছের উপকারিতাঃ
তুলসী ইংরেজি নাম: Holy basil or Tulasī)
বৈজ্ঞানিক নাম: Ocimum Sanctum তুলসী একটি ঔষধিগাছ হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত। তুলসী অর্থ যার তুলনা নেই। তুলসী গাছের নানা ঔষধি ব্যবহার রয়েছে। সর্দ্দি, কাশি, ঠাণ্ড লাগা ইত্যাদি নানা সমস্যায় তুলসী পাতা বা পাতার রস ব্যবহার করা হয়ে থাকে । তুলসী গাছের রস কৃমি ও বায়ুনাশক ঔষধ হিসাবে কাজ করে। এই গাছের ব্যবহার্য অংশ হলো এর রস, পাতা এবং বীজ।
প্রকারভেদঃ বাংলাদেশে মূলত চার ধরনের তুলসীগাছ দেখতে পাওয়া যায়।বাংলাদেশে যে চার প্রকার তুলসী গাছ দেখা যায় সেগুলি হলো:
১- বাবুই তুলসী
২- রামতুলসী
৩- কৃষ্ণ-তুলসী
৪- শ্বেত তুলসী।
ঔষধের কাজে একটি অন্যটির পরিবর্তে ব্যবহার করা যায়।
তুলসী পাতার জাদুকরি রূপ:
ব্রিটিশরা যখন ভারতে পা রাখে তখন মশার অত্যাচার থেকে বাঁচতে তুলসী গাছের শরণাপন্ন হয়। তারা বাংলোর চারদিকে তুলসী ও নিমের গাছ লাগিয়ে রাখতো। যা ব্রিটিশদের বিস্ময়ের কারণ হয়েছিল তুলসী গাছের উপকারী দিকের জন্য । তারা একে বলত ',🐝মসকিউটো প্ল্যান্ট'🐝। কারণ মশা তাড়াতে তুলসী তার নামের মতোই কাজেও ছিল অতুলনীয়।
পোল্ট্রি শিল্পে এই জাদুকরী গাছের অন্যান্য কিছু গুণ হচ্ছে:
- খামারে অতিরিক্ত মশার উৎপাত দেখা দিলে তা হতে রক্ষা পেতে তুলসী পাতার রস খুবই উপকারী, তুলসীপাতার রস পানিতে মিশিয়ে নিয়মিত স্প্রে করতে পারলে মশা ও জীবাণু দুটোই খামার ছেড়ে পালিয়ে যাবে।
-তুলসী পাতার রসে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাংগাল নামের উপাদান বিদ্যমান যা রক্ত পরিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে।
-পানিতে তুলসী পাতার সঙ্গে এলাচ ও গোল মরিচ দিয়ে পানিকে ফুটিয়ে সেই পানি পোল্ট্রিকে খাওয়ালে নিমিষেই পোল্ট্রির জ্বর চলে যায়।
- তুলসীপাতার রসে জীবাণুনাশক ও সংক্রমণ শক্তিনাশক উপাদান থাকায় যে কোনো ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধে তুলসীর পাতার রস অনন্য ভুমিকা পালন করে থাকে।
- পোল্ট্রির ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ এবং ঠাণ্ডা-সর্দিতে তুলসী পাতার সঙ্গে মধু ও আদার মিশ্রণ দারুণ কাজ করে।
- তুলসী পাতার রস ও হালকা গরম পানির মিশ্রিণ পাকস্থলী পরিস্কার রাখতে সাহায্য করে।
- দেহ থেকে বিষাক্ত উপাদান দূর করতে তুলসী পাতার রস অতুলনীয়।
- তুলসীকে সাধারণত নার্ভের টনিক বলা হয়ে থাকে। তুলসী পাতা পাকস্থলীর ও কিডনীর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
- তুলসী পাতার রস হলো প্রোফাইল্যাক্টিভ যা, পোকামাকড় কামড় দিলে উপসম করতে সক্ষম। পোকার কামড়ে আক্রান্ত স্থানে তুলসী পাতার তাজা রস লাগিয়ে রাখলে কামড়ের ব্যথা ও জ্বলা থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যায়।
- তুলসী সাধারণত এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে, ছত্রাক ও জিবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে।
- পোল্ট্রির চোখ ফোলা ও পানি ঝরা কমাতে তুলসী পাতার রসের সাথে খাঁটি মধু মিশিয়ে মুছে দিলে ভালো কাজ করে।
- পোল্ট্রির শরীরের কোনো অংশ কেটে গেলে কিংবা যেকোন আঘাতে ক্ষত হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তুলসি পাতার রস দিয়ে লেপে দিলে সাথে সাথে জ্বালা যন্ত্রণা কমে যায়।
- তুলসী পাতার রস অ্যালকোহলিক নির্যাস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- অনেক সময় পোল্ট্রির কোন কারণ ছাড়াই বা ময়লা কিছু খেয়ে ফেললে পেটে সমস্যা হয়ে থাকে ,এক্ষেত্রে দুবেলা দু ফোটা তুলসী পাতার রস খাইয়ে দিলে ম্যাজিকের মত কাজ করে।
তুলসীপাতার ব্যবহার বিধিঃ
১। তুলসী পাতার রস ১ চা চামুচ ১ লিটার পানিতে (৫ মি লি)।
২। তুলসী পাতার গুঁড়া ১চা চামুচ ১ লিটার পানিতে (৫ গ্রাম)।
৩। তুলসী পাতার বাটা ১চা চামুচ ১লিটার পানিতে ।
৪। তুলসী পাতা সিদ্ধ পানি (১ লিটারে ১০ - ১২ টা পাতা দিতে হবে)।
সপ্তাহে কমপক্ষে ৩ দিন ও সকালের প্রথম পানিতে।
সতর্কীকরণঃ
- তুলসী পাতা অবশ্যই রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিতে হবে।
-তুলসী পাতার গুঁড়ো ২ মাসের বেশি সংরক্ষণ করা যাবে না।কারণ এতে প্রয়োজনীয় গুনা গুন নষ্ট হয়ে যায়।
- তুলসী পাতা সেদ্ধ পানি ৩ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখা যাবে।
- ভেষজ মিশ্রিত পানি ৬ ঘন্টার বেশি রাখা যাবে না।
সাধারণত নিয়মিত তুলসী পাতার রস ব্যবহারের ফলে খামারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ব্যাপক উপকার পাওয়া সম্ভব।সবচেয়ে বড় বেপার ওষুধের খরচ কমে যাবে অধিক অংশে।
প্রকৃতিতে সব রকম রোগের ওষুধ ই বিদ্যমান।
তুলসীপাতার রস সকল রোগবালাই কে ঝেটিয়ে বিদায় করতে এক্সপার্ট এর ভূমিকা পালন করে থাকে।
তাই আমাদের উচিত খামারে তুলসী পাতার ব্যবহার বৃদ্ধি করা এবং উপকৃত হওয়া।।প্রয়োজনে বিশেষ জায়গা নির্ধারন করে তুলসীর গাছ লাগানো যায়।
তথ্য সংগৃহীত
0 মন্তব্যসমূহ