খামারে ফ্যাটেনিং করার আগে খামার পরিচালনা করার কিছু বিষয় জানা থাকা খুবই জরুরী।
আমরা প্রায়ই দেখি ইউটিউবে বা কোন সোসাইল মিডিয়ায় অল্প খরচে এবং কম সময়ে খামার করে লাক্ষপতি বা কোটিপতি হওয়া যায়, আসলে এ সব তখনেই বুঝা যায় যখন কেউ এই প্রলোভন দেখে বড়ো পরিমাণে খরচ করে লস করে ফেলেন। তাই এ সবে কান না দিয়ে আগে বাস্তবতা কে দেখে নিন এবং শিখুন। হালাল পথে টাকা আয় করার প্রতিটি রাস্তাই কষ্টের।তবে হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না কষ্ট দেখে। কেননা কষ্টের পরেই হয়তো সুখের দেখা মিলে। একটি খামারকে লাভমান করতে হলে করণীয় বিষয় গুলো হচ্ছে-
ক.রঙিন স্বপ্ন দেখা
খ. ব্যবস্থাপনা
গ.চিকিৎসা খরচ
ঘ.খাদ্য খরচ
ঙ.বায়ো সিকিউরিটি
চ. শ্রমিক
ছ. ব্যয়ের হিসাব
জ.জাত নির্বাচন
ঝ. দালাল মুক্ত গরু ক্রয়
ঞ.ধৈর্যশীল হতে হবে
ট.খামারে সময় দেওয়া
ঠ.গরুর প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে
যা এক এক করে নিম্নে বর্ণনা করা হল-
ক.রঙ্গিন স্বপ্ন দেখা
কল্পনাকে গুরুত্ব না দিয়ে বাস্তবতা কে প্রাধান্য দিতে হবে। অন্যের সাফল্যের গল্প শুনে ঝাপিয়ে পড়া যাবে না এবং অন্যের ব্যার্থতার গল্প শুনে ভয় পাওয়া ও ঠিক না। জীবনটা একটা পরিক্ষা কেন্দ্র, মজার ব্যাপার হলো একেক জনের প্রশ্ন পএ একেক রকম। কেউ কাউকে নকল করার সুযোগ নেই। বাস্তবতা বড়ই কঠিন।
খ. ব্যবস্থাপনাঃ
সঠিক ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী খামার পরিচালনা করতে হবে। গরুর যে কোন সমস্যা হলে তাৎক্ষনিক সমাধান করতে হবে। কোন ভাবেই অবহেলা করা যাবে না।
সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্যে একটি রুটিন ফ্লো করা যেতে পারে।
গ.চিকিৎসা খরচঃ
মেডিসিন এর উপর পরিপূর্ণ নির্ভরশীলতা বন্ধ করতে হবে।বড় মেডিসিন ঘাস ও যত্ন। রোগ প্রতিকার নয়, প্রতিরোধ করতে হবে। তার জন্য আগে থেকেই ভ্যাকসিন গুলো দিয়ে রাখতে হবে।
ঘ.খাদ্য খরচঃ
যতটুকু সম্ভব খাদ্য খরচ কমাতে হবে, তবে খাদ্যের গুনগত মান ঠিক রেখে কমাতে হবে। দানাদার গরুর প্রধান খাদ্য নয় শুধু সহায়ক।তাই প্রধান খাদ্য ঘাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
ঙ.বায়োসিকিরেটিঃ
বায়োসিকিরেটি মেনে চলতে হবে। যে কোন সময় খামারে যে কেউ প্রবেশ করা বন্ধ করতে হবে। ও খামার সবসময়ই পরিষ্কার ও জীবাণু মুক্ত রাখতে হবে।
চ.শ্রমিকঃ
রাখাল বা শ্রমিক গরুর সংখ্যা বেশি হলে রাখতে হবে। ৫/৬ টি গরুর জন্য রাখাল রাখা চিন্তা করা যাবে না। তাহলে লাভ চোখে দেখা যাবে না।
ছ.ব্যয়ের হিসাবঃ
আয়ের তুলনায় ব্যয় যেনো হয় তা খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য খামারে যেখানে কম টাকা দিয়ে কোন একটি কাজ সঠিক ভাবে সমাধান হয় তাই করতে হবে। ভিআইপি করার জন্য অধিক টাকা খরচ করা যাবে না।
জ.জাত নির্বাচনঃ
খামারের উন্নতি অনেকটা নির্ভর করে জাতের ওপর।
ফ্যাটেনিং ফার্মের উদ্দেশ্য হল মাংশ উৎপাদন করা।অল্প সময়ে অধিক মাংস উৎপাদনের জাত হলঃ
হলিষ্টিন ফিজিয়ান” ফিজিয়ান” সিন্ধী” সংকর,
শাহীওয়াল ইত্যাদি। তবে স্থানীয় বাজারের চাহিদার ভিত্তিতে দেশী গরু দিয়ে ও করা যায়।
ঝ. দালাল মুক্ত গরু ক্রয়ঃ
অসাধু দালাল মুক্ত গরু কিনতে হবে। নয়লে লস হতে পারে। ফ্যাটেনিং এর জন্য গরু কিনার সময় ওজন অনুযায়ী গরু কিনতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদি প্রজেক্টের জন্য গরু কিনলে অবশ্যই জাত ও গায়ের রং এর দিকে লক্ষ রাখতে হবে।
ঞ.ধৈর্যশীল হতে হবেঃ
গরুর লাথি খেয়ে ও গরু কে আঘাত করা যাবে না,শত বাঁধা আসলে ও ধৈর্য সহকারে লেগে থাকতে হবে।
ঝড়ে গেলে চলবে না।
ট.খামারে সময় দেওয়াঃ
নিজে বিনিয়োগ করে অন্যের ওপর খামারের দায়িত্ব দেওয়া ঠিক না। খামার কে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিজেকে খামারে সময় দিতেই হবে। অন্য কেউ সহযোগী হতে পারে কিন্তু দেখা শুনা নিজেই করতে হবে।
ঠ.গরুর প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবেঃ
মায়া বা গরুর প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে।
গরু পালতে হলে নিজে গরু হতে হবে। দামী পেন্ট আর দামী শার্ট খুলে কমদামী লঙ্গি আর গেন্জি ও গামচা পড়ার অভ্যাস করতে হবে। ও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন তুমি তোমার চেষ্টার প্রাপ্য পেয়ে থাকবে
তাই সফলতা এমনেই আসে না টেনে নিয়ে আসতে হয় পরিশ্রম এর মাধ্যমে। এতএত পরিশ্রম করতে হবে। উপরোক্ত বিষয় গুলো খেয়াল রেখে খামার পরিচালনা করলে, ইনশাআল্লাহ লাভবান হওয়ার সম্ভাব অনেক গুল বেড়ে যায়।
ইংল্যান্ডের ব্ল্যাক স্টোন টার্কি সম্বন্ধে জানতে ভিডিওটি দেখুন
0 মন্তব্যসমূহ