মুরগির তীব্র হাঁচি-কাশি রোগের চিকিৎসা
ক্ষুদ্র অণুজীবের দ্বারা শ্বাসনালী আক্রান্ত মুরগিতে তীব্র হাঁচি-কাশি দেখা যায়। খামারিরা এ রোগে
ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। আসুন জেনে নিই মুরগির তীব্র হাঁচি-কাশি রোগের চিকিৎসা।
ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। আসুন জেনে নিই মুরগির তীব্র হাঁচি-কাশি রোগের চিকিৎসা।
মুরগির হাঁচি-কাশি দুটি রোগের কারণে হয়ে থাকে
ক.ইনফেকসাস ল্যারিংগোট্র্যাকিয়াইটিস:
এই রোগের জীবাণু এক প্রকার ভাইরাস। ইহা একটি সংক্রামক ও মারাত্মক ছোঁয়াচে প্রকৃতির রোগ। সাধারণতঃ শ্বাসযন্ত্রই এ রোগে আক্রান্ত হয়।
লক্ষণঃ
মুরগির শ্বাসযন্ত্রে ঘড় ঘড়, সাঁ সাঁ শব্দ ও কাশি এ রোগের প্রধান লক্ষণ। ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস, কফ ও হাঁচি হয় এবং শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। শ্বাস গ্রহণকালে মুরগির হাঁপানো ভাব হয় এবং বড় হা করে মাথা ও ঘাড় উপরের দিকে উঠাতে থাকে। অপরদিকে শ্বাস ত্যাগকালে মুখ বন্ধ করে নীচের দিকে নামিয়ে দেয়। চোখ ভেজা থাকে। নাক দিয়ে রক্ত মিশ্রিত শ্লেষ্মা বের হয়। মাথার ঝুটি ও কানের লতি বেগুনী রংয়ের হয়। বেশী মারাত্মক হলে রোগ দেখা দেয়ার দু-একদিনের মধ্যেই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মুরগি মারা যায়।
প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ:
আক্রান্ত মুরগিকে পৃথক করে রাখতে হবে। এ রোগ থেকে বেঁচে থাকা মোরগ-মুরগি ভাইরাসের বাহক হিসাবে কাজ করে। সুতরাং রোগ থেকে সেরে ওঠা মোরগ-মুরগি সুস্থ্য মোরগ-মুরগির সঙ্গে না রেখে আলাদা করে রাখতে হবে। মৃত মোরগ-মুরগিকে যেখানে সেখানে না ফেলে মাটিতে পুঁতে রাখতে হবে। মোরগ-মুরগির খোঁয়াড়/খামারে মাঝে মাঝে জীবাণুনাশক ঔষধ ছিটাতে হবে। মৃত মোরগ-মুরগি সরিয়ে নেয়ার পর জীবাণুনাশক ঔষধ দ্বারা ঘরের মেঝে পরিস্কার করতে হবে।
চিকিৎসাঃ
এ রোগের কার্যকরী কোন চিকিৎসা নাই। তবে দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমন রোধে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে।
ইনফেকসাস ল্যারিংগোট্র্যাকিয়াইটিস রোগ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অনলাইন প্রাণিসম্পদ তথ্য ভান্ডার বা ই-লাইভস্টক থেকে নেওয়া হয়েছে।
খ. মাইক্রোপ্লাজমোলেসিস বা ক্রনিক রেসপাইরেটরী ডিজিজ (সি আর ডি)।
মাইক্রোপ্লাজমোলেসিস:
Mycoplasma gallisepticum নামক জীবানু দ্বারা শ্বাসতন্ত্রের এ রোগটি হয়। বাংলাদেশের শীত কালে সাধারনত এই রোগের প্রকোপ দেখা যায়। এই দেশের আবহাওয়ায় সাধারনত নভেম্বর মাস হতে জানুয়ারি মাস পযন্ত এই রোগ বেশি হয়। তবে, মুরগির বাচ্চা যদি
ব্রুডিং করতে ঠান্ডা লাগে তাহলে মাইক্রোপ্লাজমোলেসিসে আক্রান্ত হতে পারে। পরবর্তীতে সব ধরনের মুরগির এ রোগ হেয়। সেইসাধে সব বয়সের মুরগির হয়ে থাকে তবে ৪-১০ সপ্তাহের মুরগির এই রোগ বেশি হয়।
মাইক্রোপ্লাজমোলেসিস রোগের লক্ষণঃ
১। যেহেতু এটি শ্বাস তন্ত্রের রোগ সেহেতু হাচি, কাশি দেখা যাবে।
২।সবচেয়ে গুরুত্বপুণ লক্ষণ হল , মুরগী ঘড় ঘড় শব্দ করে,(রাত্রে বেশি ভালো বোঝা যায়) মুলত এই লক্ষণ দেখেই নিশ্চিত হওয়া যায়।
৩।আক্রান্ত মুরগী মুখ হা করে শ্বাস নেয়।
৪। খাদ্য গ্রহন কমিয়ে দেয়।
৫। ডিম উৎপাদন কমে যায়।
৬।শরীরের ওজন কমে যায়।
৭।নাক দিয়ে সদি পড়ে।
৮।মুখ ফুলে যাবে।
মাইক্রোপ্লাজমোলেসিস রোগ হলে আক্রান্ত মুরগির দেহে অন্যান্য ব্যাকটেরিয়ার জন্য রোগ সৃষ্টির ভালো পরিবেশ তৈ্রি হয়। বিশেষ করে কলিবেসিলোসিস এর সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া ইনফেক্সিয়াস ব্রঙ্কাই্টিস হলে খামারে জ়টিল অবস্থা সৃষ্টি হয় মাইক্রোপ্লাজমোলেসিস হলে লেয়ার মুরগীর ক্ষেত্রে ১০-২০% ডিম উৎপাদন কমে যায় ।এছাড়া ব্রয়লারের ক্ষেত্রে ১০-২০% ওজন কমে যায়।
মুরগির পোস্ট মর্টেমে যেসব লক্ষণ দেখে চেনা যায় মুরগির মাইক্রোপ্লাজমোলেসিস হয়েছে।
১।বায়ু থলি ঘোলাটে ও মোটা হয় ।
২।নাকের ছিদ্র ও শ্বাসনালীতে আঠালো মিউকাস থাকে ।
৩।নাকের ও মাথার সাইনাসে পনী্রের মত বস্তু পাওয়া যায়।
৪।তবে এ ধরনের পনীরের মত বস্তু ফুসসুস, হৃদপিন্ড, এবং বায়ুথলীতে পাওয়া যাবে।
৫।শ্বাসনালীতে প্রদাহ দেখা যাবে।
৬।অনেক সময় কলিজার উপরে সাদা সাদা স্পট দেখা যায়।
মুরগির তীব্র হাঁচি-কাশি রোগ বা মাইক্রোপ্লাজমোলেসিস রোগের চিকিৎসা:
১।সিপ্রফ্লোক্সাসিন ১সিসি/১লি এ ৩-৫ দিন প্রয়োগ করতে হবে , অথবা এনরোফ্লোক্সাসিন দেয়া যেতে পারে।
২। তবে বাজারের ঔষধগুলোর মধ্যে রেনেটা কোম্পানীর মাইক্রোনিড মাইক্রোপ্লাজমোলেসিস এর বিরুদ্ধে ভালো কাজ করে।
৩। এছাড়া টাইলোসিন টারট্রেট ২০% ২.৫ গ্রাম/লি এবং
৪। ডক্সিসাইক্লিন হাইড্রোক্লোরাইড ১০% ১ গ্রাম /লি এ দেয়া যেতে পারে।
0 মন্তব্যসমূহ