Header Ads Widget

ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে অধর্মের গান গেয়ে লাভ নেই।

ইসলাম শুধুমাত্র সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির থিওরি দিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি। সমাজ ও রাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে প্রাকটিক্যালি রূপদান করেছে এই ইসলাম। 


রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরতের পর  মদিনাকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। 


তখন মদিনা ছিল পৌত্তলিক সম্প্রদায়, ইহুদি সম্প্রদায়, মুসলিম সম্প্রদায়—এই তিন সম্প্রদায়ের লোকের একটি নিরাপদ আবাসভূমি। রাসুলুল্লাহ (সা.) উপলব্ধি করলেন, এই সম্প্রদায় গুলোর মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপিত না হলে মদিনার মধ্যে শান্তি, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। 


তাই বিশ্ব শান্তির দূত মুহাম্মদ (সা.) মদিনাবাসীকে সেই সময় একটি লিখিত শান্তিসনদ দান করেন। সনদে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নেতারা নিজেরাই স্বাক্ষর করেন। ইতিহাসে এই সনদকে বলা হয়ে থাকে মদিনা সনদ। মদিনা সনদই পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম লিখিত রাষ্ট্রীয় মূলনীতি। 


আর ঐতিহাসিক মদিনা সনদের কয়েকটি নীতি যা নিম্নে তুলে ধরা হলো- 


  # মদিনার মুসলিম,পৌত্তলিক,ইহুদি—সবাই একই রাষ্ট্রের অধিবাসী। সবার নাগরিক অধিকার সমান। 


  # মুসলিম, পৌত্তলিক, ইহুদি—প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে। কেউ কাউকে ধর্ম পালনে বাধা দিতে পারবে না। 


  # সনদে স্বাক্ষরদানকারী কোনো সম্প্রদায়কে বাইরের শত্রু আক্রমণ করলে সব সম্প্রদায় সম্মিলিতভাবে শত্রুর মোকাবিলা করবে। 


  #  বহিঃশত্রু মদিনা আক্রমণ করলে সব সম্প্রদায়ের সমবেত শক্তি দ্বারা বহিঃশত্রুকে বাধা দিতে হবে। 


  # কোনো সম্প্রদায়ই বাইরের কোনো শত্রুর সঙ্গে গুপ্ত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে পারবে না। 


  # রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পূর্ব অনুমতি ছাড়া কেউ কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে না। 


  #  ব্যক্তিগত অপরাধের জন্য ব্যক্তিকেই দায়ী করা হবে। তাঁর সম্প্রদায়কে দায়ী করা চলবে না। 


  #  সনদে স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মীমাংসার ওপর সবাইকে নির্ভর করতে হবে। (ইসলামের ইতিহাস : হাসান আলী চৌধুরী, পৃ. ৭৪-৭৫) 


আমাদের এই সাম্প্রদায়িক মনোভাবের বিরুদ্ধে 

    - মদিনা সনদই সাক্ষ্য দেয় যে, ইসলামের মধ্যে কোন ধর্মে বিরোধ চায় না, শান্তি চায়। 

    - মদিনা সনদই সাক্ষ্য দেয়, ইসলাম বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে শত্রুতা চায় না, মৈত্রী চায়।

    - মদিনা সনদই সাক্ষ্য দেয়, ইসলাম কট্টরতা চায় না, উদারতা চায়। 

    - মদিনা সনদই সাক্ষ্য দেয়, ইসলামের দৃষ্টিতে রাষ্ট্রীয় জীবনে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকার সমান। 



আর রাষ্ট্রীয় জীবনে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় ইসলামই দুনিয়ার বুকে সর্বপ্রথম বাস্তব আদর্শ স্থাপন করে আছে, মদিনা সনদই তার উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে থাকবে। 


এক সময় নাজরানের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিস্বরূপ একদল খ্রিস্টান রাসুলুল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে মদিনায় চলে আসে। উভয় পক্ষের মধ্যে আলাপে আলাপে সন্ধ্যা হয়ে যায়। সন্ধ্যা হচ্ছে মুসলিমদের মাগরিবের নামাজের সময়। 


খ্রিস্টানদেরও সান্ধ্য ছিল উপাসনার সময়। রাসুলুল্লাহ (সা.) সান্ধ্য উপাসনার জন্য খ্রিস্টানদের মসজিদে নববীতেই স্থান করে দেন। 


একই মসজিদে খ্রিস্টানরা পূর্ব দিকে মুখ করে সান্ধ্য উপাসনা শুরু করেন। আর মুসলিমরা কাবামুখী হয়ে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। (বিশ্বনবী, পৃ. ৫০৮) 


বর্তমান সময়ের ধর্মীয় সম্প্রদায়িকথার ব্যাপারে উদারতার এর চেয়ে বাস্তব উদাহরণ আর কী হতে পারে! 


রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ছিলেন বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত। ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় তিনি কারো প্রতি কোনো ধরণের পক্ষপাতমূলক আচরণ করেননি। অন্যায়ের ক্ষেত্রেও তিনি কখনো কারো সঙ্গে আপোষ করেননি। অন্যায়ভাবে কোনো মুসলিমের পক্ষ অবলম্বনও করেনি। তিনি ছিলেন ন্যায়ের প্রতীক।

মানুষ হিসেবে তিনি সবার প্রতি ছিলেন উদার ও উত্তম আচরণকারী। প্রতিবেশি যে-ই হোক অর্থাৎ মুসলিম কিংবা অমুসলিম তার অধিকারের ব্যাপারে তিনি ছিলেন সজাগ দৃষ্টিসম্পন্ন।

সুতরাং মুসলিম উম্মাহর উচিত, বিশ্বনবি (সাঃ) এর সাম্প্রদায়িত সম্প্রীতির এ উদার নীতি ও দৃষ্টান্ত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া। 

ইসলাম ও মুসলমানদের লালিত এবং মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ)  আদর্শগুলো বিশ্বব্যাপী তুলে ধরা। আর তাতে মুসলিম-অমুসলিম সব মানুষের কাছে পৌছে যাবে বিশ্বনবির সুমহান আদর্শ।


তাই ইসলাম ধর্ম অপব্যবহারকারীদের বর্জন করুন। শান্তিপূর্ণ দেশ গঠন করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ