নদী বা সমুদ্র পারের মানুষজনের কাছে জোয়ার-ভাটা খুবই সাধারণ এক ঘটনা। প্রতিদিনই তারা নদীর পানি বাড়তে ও কমতে দেখেন। আপনারা যারা কক্সবাজার গিয়েছেন তারা একটা দৃশ্য লক্ষ্য করে থাকবেন যে সৈকতের কাছাকাছি কোন বাঁশের গোঁড়ায় লাল পতাকা ঝুলছে। এই লাল পতাকার মানে ‘এখন ভাটা চলছে ও সমুদ্রে নামা যাবে না’। কেননা ভাটার সময় সমুদ্রের জলরাশি নেমে যায় ও এই সময় পানির স্রোত সমুদ্র তীরের বিপরীত দিকে থাকে। আর জোয়ারের সময় পানির স্রোত থাকে তীরের দিকে। এটি একটি প্রাকৃতিক ঘটনা।
কিন্তু কেন হয় এরকম? তবে তার আগে জেনে নেই জোয়ার-ভাটা বলতে আসলে কি বুঝায়।
চন্দ্র-সূর্যের আকর্ষণ শক্তি, পৃথিবীর কেন্দ্র শক্তি এবং আহ্নিক গতির কারণে সমুদ্রের পানি নির্দিষ্ট সময় অন্তর এক জায়গায় ফুলে ওঠে, আবার অন্য জায়গায় নেমে যায়। সমুদ্র পানির এভাবে ফুলে ওঠাকে জোয়ার এবং নেমে যাওয়াকে ভাটা বলে। উপকূলে কোনো একটি স্থানে পর পর দুটি জোয়ার বা পর পর দুটি ভাটার মধ্যে ব্যবধান হলো ১২ ঘণ্টা।
জোয়ার-ভাটা সংঘটিত হওয়ার মূখ্য কারণ হচ্ছে চন্দ্র-সূর্যের আকর্ষণ শক্তি। তবে জোয়ার-ভাটা সৃষ্টিতে চাঁদের আকর্ষণ বলই বেশী কাজ করে। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, জোয়ার উৎপাদনের ক্ষেত্রে সূর্যের ক্ষমতা চাঁদের ক্ষমতার নয় ভাগের চার ভাগ। এছাড়াও জোয়ার-ভাটা সৃষ্টিতে আহ্নিক গতির প্রভাবও উল্লেখযোগ্য। আমরা সকলেই জানি, পৃথিবীতে দিনরাত্রি হওয়ার প্রধান কারণও এই আহ্নিক গতি। এই গতির ফলে সমুদ্র-স্রোতের দিক পরিবর্তন হয়। ফলে স্রোত যেদিকে প্রবাহিত হয় সেদিকে জোয়ার এবং যেদিক হতে প্রবাহিত হয় সেদিক ভাঁটার সৃষ্টি হয়। এছাড়াও পৃথিবীর আবর্তনের ফলে সৃষ্ট কেন্দ্রাতিগ শক্তি বা কেন্দ্রবিমুখী শক্তির ফলেও জোয়ার-ভাটা সৃষ্টি হতে পারে। কোনো স্থানে জোয়ার সৃষ্টির প্রায় ৬ ঘণ্টা ১৩ মিনিট পরে ভাটা সংঘটিত হতে পারে।
সহজ কথায় বলতে গেলে, চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। এই ঘূর্ণনজাত কেন্দ্রাতিক বলের ফলে পৃথিবী চাঁদ থেকে দূরে সরে যেতে চাচ্ছে আর তার বিপরীতে কাজ করছে চাঁদের আকর্ষণ। পৃথিবীর যে পৃষ্ঠ চাঁদের দিকে সেদিকে চাঁদের আকর্ষণ কেন্দ্রাতিক বলের চেয়ে বেশি বলে সেখানকার পানি ফুলে উঠে জোয়ারের সৃষ্টি করে। একই সময় পৃথিবীর অপরদিকে চাঁদের আকর্ষণ কেন্দ্রাতিগ বলের চেয়ে কম বলে সেখানকার পানিও ফুলে উঠে। এ দুটি পৃষ্ঠের লম্বভাবে অবস্থিত স্থানে চলে ভাটা। এ কারণেই কোনস্থানে দিনে দুবার জোয়ার-ভাটা হয়।
0 মন্তব্যসমূহ