Header Ads Widget

কিছু করার পূর্বে মহান আল্লাহর ওপর নির্ভর করার উপকারিতা


اِیَّاکَ نَعۡبُدُ وَ اِیَّاکَ نَسۡتَعِیۡنُ ؕ

আমরা শুধু তোমারই ‘ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি ক্বিরা’আত প্রসঙ্গ ‘ইবাদত শব্দের ধর্মীয় তত্ত্ব ও তাৎপর্য ‘‘ইবাদত’ শব্দের আভির্ধানিক অর্থ হচ্ছে সার্বিক অপমান ও নীচতা। যেমন ‘তারীকে মোয়াব্দ’ সাধারণ ঐ পথকে বলে যা সবচেয়ে হীন ও নিকৃষ্ট হয়ে থাকে। এ রকমই بَعِيْرٌ مُعَبَّدٌ ঐ উটকে বলা হয় যা হীনতা ও দুর্বলতার চরম সীমায় পদার্পণ করে। শারী‘আতের পরিভাষায় প্রেম, বিনয়, নম্রতা এবং ভীতির সমষ্টির নাম ‘‘ইবাদত।’ কিছু করার পূর্বে মহান আল্লাহর ওপর নির্ভর করার উপকারিতা পঞ্চম আয়াতটির অর্থ দাঁড়ায়ঃ ‘আমরা আপনার ব্যতীত আর কারো ‘ইবাদত করি না এবং আপনার ব্যতীত আর কারো ওপর নির্ভর করি না।’ এখানে إيَّاكَ শব্দটি মাফউল, একে পূর্বে আনা হয়েছে। অতঃপর তার পুনরাবৃত্তি হয়েছে, যাতে তার গুরুত্ব বেড়ে যায়। আর সাহায্য প্রার্থনার জন্যে যেন একমাত্র আল্লাহই বিশিষ্ট হয়ে যান। আর এটা হচ্ছে পূর্ণ আনুগত্য ও বিশ্বাস। সালফি সালিহীন বা পূর্বযুগীয় প্রবীণ ও বয়োবৃদ্ধ বিজ্ঞজনদের কেউ কেউ এ মত পোষণ করেন যে, সম্পূর্ণ কুর’আনের গোপন তথ্য রয়েছে সূরাহ্ ফাতিহার মধ্যে এবং এ পূর্ণ সূরাহ টির গোপন তথ্য ﴿اِیَّاكَ نَعْبُدُ وَ اِیَّاكَ نَسْتَعِیْنُ﴾ এ আয়াতটিতে রয়েছেঃ আয়াতটির প্রথমাংশে রয়েছে র্শিকের প্রতি অসন্তুষ্টি এবং দ্বিতীয়াংশে রয়েছে স্বীয় ক্ষমতার ওপর অনাস্থা ও মহাশক্তিশালী মহান আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল। এ সম্পর্কীয় আরো বহু আয়াত পবিত্র কুর’আনে বিদ্যমান রয়েছে। যেমন তিনি বলেনঃ ﴿فَاعْبُدْهُ وَ تَوَكَّلْ عَلَیْهِ١ؕ وَ مَا رَبُّكَ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ﴾ সুতরাং তাঁর ‘ইবাদত করো এবং তাঁর ওপর নির্ভর করো, আর তোমরা যা করো সে সম্বন্ধে তোমার রাব্ব অনবহিত নন। (১১ নং সূরাহ্ হুদ, আয়াত নং ১২৩) তিনি আরো বলেনঃ ﴿ قُلْ هُوَ الرَّحْمٰنُ اٰمَنَّا بِهٖ وَ عَلَیْهِ تَوَكَّلْنَا ﴾ বলোঃ তিনি দয়াময়, আমরা তাঁকে বিশ্বাস করি ও তাঁরই ওপর নির্ভর করি। (৬৭ নং সূরাহ্ মূল্ক, আয়াত নং ২৯) আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেনঃ ﴿رَبُّ الْمَشْرِقِ وَ الْمَغْرِبِ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ فَاتَّخِذْهُ وَكِیْلًا﴾ তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের অধিকর্তা, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই; অতএব তাঁকেই কর্ম-বিধায়ক রূপে গ্রহণ করো। (৭৩ নং সূরাহ্ মুয্যাম্মিল, আয়াত নং ৯) ﴿اِیَّاكَ نَعْبُدُ وَ اِیَّاكَ نَسْتَعِیْنُ﴾ এ আয়াতেও এই বিষয়টিই রয়েছে। পূর্ববর্তী আয়াতগুলো সম্মখুস্থ কাউকে লক্ষ্য করে সম্বোধন ছিলো না। কিন্তু এ আয়াতটিতে মহান আল্লাহকে সম্বোধন করা হয়েছে এবং এতে বেশ সুন্দর পারস্পরিক সম্বন্ধ রয়েছে। কেননা বান্দা যখন মহান আল্লাহর গুণাবলী বর্ণনা করলো তখন সে যেন মহাপ্রতাপশালী মহান আল্লাহর সম্মুখে হাযির হয়ে গেলো। এখন সে মালিককে সম্বোধন করে স্বীয় দীনতা, হীনতা ও দারিদ্রতা প্রকাশ করলো এবং বলতে লাগলোঃ ‘হে মহান আল্লাহ! আমারা তো আপনার হীন ও দুর্বল দাস মাত্র এবং আমরা সব কাজে, সর্বাবস্থায় ও সাধনায় একমাত্র আপনারই মুখাপেক্ষী। এ আয়াতে এ কথারও প্রমাণ রয়েছে যে, এর পূর্ববর্তী সমস্ত বাক্যে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এ খবর দেয়া হয়েছিলো। সূরাহ্ ফাতিহা মহান আল্লাহর প্রশংসা শিক্ষা দেয় আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় উত্তম গুণাবলীর জন্য নিজের প্রশংসা নিজেই করেছিলেন এবং বান্দাদেরকে ঐ শব্দগুলো দিয়েই তাঁর প্রশংসা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এজন্যই যে ব্যক্তি এ সূরাহ টি জানা সত্ত্বেও সালাতে তা পাঠ করে না তার সালাত হয় না। যেমন সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমের হাদীসে ‘উবাদাহ ইবনু সাবিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ لَا صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ. ‘ঐ ব্যক্তির সালাতকে সালাত বলা যায় না যে সালাতের মধ্যে সূরাহ্ ফাতিহা পাঠ করে না।’ (সহীহুল বুখারী-৭৫৬, সহীহ মুসলিম ১/২৯৫। আমাদের দেশে হানাফী মাযহাবের অনুসারী ভাইয়েরা ইমামের পিছনে সূরাহ্ ফাতিহা পাঠ করেন না, এটা মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ‘আমলের পরিপন্থী। ইমামের পিছনে মুক্তাদিকে অবশ্যই সূরাহ্ ফাতিহা পাঠ করতে হবে। মুক্তাদী ইমামের পিছনে সূরাহ্ ফাতিহা না পড়লে তার সালাত, সালাত বলে গণ্য হবে না। যেমন মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বাণীঃ عن عمروبن شعيب عن أبيه عن جده قال قال رسول الله (রাঃ) تقرؤون خلفي؟ قالوا نعم إنا لنهذ هذا قال فلا تفعلوا إلا بأم القرآن. সহীহুল বুখারীর অন্য বর্ণনায় জুয’উল কিরা’আতের মধ্যে আছে ‘আম্র বিন শু‘আইব তাঁর পিতা থেকে, তাঁর পিতা তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করে বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন তোমরা কি আমার পিছনে কিছু পড়ে থাকো? তাঁরা বললেন যে, হ্যাঁ আমরা খুব তাড়াহুড়া করে পাঠ করে থাকি। তারপর মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন তোমরা উম্মুল কুর’আন অর্থাৎ সূরাহ্ ফাতিহা ব্যতীত কিছুই পড়ো না। [সহীহুল বুখারী হাঃ ১ম ১০৪ পৃষ্ঠা। জুযউল ক্বিরা’আত। সহীহ মুসলিম ১৬৯, ১৭০ পৃষ্ঠা। সুনান আবূ দাঊদ ১০১ পৃষ্ঠা। জামি‘ তিরমিযী ১ম খণ্ড ৫৭,৭১ পৃষ্ঠা। সুনান নাসাঈ ১৪৬ পৃষ্ঠা। ইবনু মাজাহ ৬১ পৃষ্ঠা। মুওয়াত্তা মুহাম্মাদ ৯৫ পৃষ্ঠা। মুওয়াত্তা ইমাম মালিক ১০৬ পৃষ্ঠা। সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ১ম খণ্ড ২৪৭ পৃষ্ঠা। সহীহ মুসলিম ইসলামিক ফাউণ্ডেশন হাদীস নং ৭৫৮-৭৬৭ ও ৮২০-৮২৪। হাদীস শরীফ, মাওঃ ‘আবদুর রহীম, ২য় খণ্ড ১৯৩-১৯৬ পৃষ্ঠা, ইসলামিয়াত বি-এ. হাদীস পর্ব-১৪৪-১৬১ পৃষ্ঠা। হিদায়াহ দিরায়াহ ১০৬ পৃষ্ঠা। মিশকাতুল মাসাবীহ ৭৮ পৃষ্ঠা। সহীহুল বুখারী হাঃ শায়খ ‘আযীযুল হক ১ম খণ্ড হাদীস নং ৪৪১। সহীহুল বুখারী হাঃ- আধুনিক প্রকাশনী ১ম খণ্ড হাদীস নং ৭১২। সহীহুল বুখারী হাঃ- ইসলামিক ফাউণ্ডেশন ২য় খণ্ড হাদীস নং ৭১৮। জামি‘ তিরমিযী- ইসলামিক ফাউণ্ডেশন ১ম খণ্ড হাদীস নং ২৪৭। মিশকাতুল মাসাবীহ- নূর মোহাম্মদ আযমী ২য় খণ্ড ও মাদ্রাসা পাঠ্য হাদীস নং ৭৬৫, ৭৬৬, ৭৯৪। বুলূগুল মারাম ৮৩ পৃষ্ঠা। কিমিয়ায়ে সা‘আদাত ১ম খণ্ড ২০৪ পৃষ্ঠা।] সহীহ মুসলিম ৪/১১, হাঃ ৩৯৪, মুসনাদ আহমাদ হাঃ ২২৮০৭; আ.প্র. হাঃ ৭১২, ই.ফা. হাঃ ৭২০।

 (অনুবাদক)) সহীহ মুসলিমে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, মহান আল্লাহ বলেছেনঃ ‘আমি সালাতকে আমার মধ্যে ও আমার বান্দার মধ্যে অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করে নিয়েছি। অর্ধেক অংশ আমার ও বাকী অর্ধেক অংশ আমার বান্দার। বান্দা যা চাবে তাকে তাই দেয়া হবে। অতএব বান্দা যখন ﴿اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَ﴾ বলে, তখন মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘আমার বান্দা আমার প্রশংসা করলো।’ বান্দা যখন বলে ﴿الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ﴾ তখন তিনি বলেনঃ ‘আমার বান্দা আমার গুণগান করলো।’ যখন সে বলে ﴿مٰلِكِ یَوْمِ الدِّیْنِ﴾ তখন তিনি বলেনঃ ‘আমার বান্দা আমার শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করলো।’ সে যখন বলে ﴿اِیَّاكَ نَعْبُدُ وَ اِیَّاكَ نَسْتَعِیْنُ﴾ তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘এটা আমার এবং আমার বান্দার মধ্যকার কথা এবং আমার বান্দার জন্য তাই রয়েছে যা সে চাবে।’ তারপর বান্দা যখন ﴿اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِیْمَۙ۝ صِرَاطَ الَّذِیْنَ اَنْعَمْتَ عَلَیْهِمْ١ۙ۬ۦ غَیْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَیْهِمْ وَ لَا الضَّآلِّیْنَ﴾ পাঠ করে তখন মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘এ সবই তো আমার বান্দার জন্য এবং আমার বান্দা যা চাবে তার জন্য তাই রয়েছে।’ (সহীহ মুসলিম ১/২৯৭) তাওহীদ আল উলুহিয়্যাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন যে, اِیَّاكَ نَعْبُدُ-এর অর্থ হচ্ছেঃ ‘হে আমার রাব্ব! আমরা বিশেষভাবে একাত্মবাদে বিশ্বাসী, আমরা ভয় করি এবং মহান সত্ত্বায় সকল সময়ে আশা রাখি। আপনি ছাড়া আর কারো আমরা ‘ইবাদতও করি না, কাউকে ভয়ও করি না এবং কারো ওপর আশাও রাখি না।’ আর وَ اِیَّاكَ نَسْتَعِیْنُ-এর তাৎপর্য ও ভাবার্থ হচ্ছেঃ ‘আমরা আপনার পূর্ণ আনুগত্য বরণ করি ও আমাদের সকল কাজে একমাত্র আপনারই কাছে সহায়তা প্রার্থনা করি। তাওহীদ আর রুবুবিয়্যাহ কাতাদাহ (রহঃ) বলেনঃ ‘এর ভাবার্থ হচ্ছে এই যে, মহান আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা একমাত্র তাঁরই উপাসনা করো এবং তোমাদের সকল কাজে তাঁরই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করো।’ اِیَّاكَ نَعْبُدُ-কে পূর্বে আনার কারণ এই যে, ‘ইবাদতই হচ্ছে মূল ঈস্পিত বিষয়, আর সাহায্য চাওয়া ‘ইবাদতেরই মাধ্যম ও ব্যবস্থা। আর সাধারণ নিয়ম হচ্ছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে পূর্বে বর্ণনা করা এবং কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে পরে বর্ণনা করা। আল্লাহ তা‘আলাই এসব ব্যাপারে সবচেয়ে ভালো জানেন। একটি প্রশ্ন ও তার সমাধান প্রশ্নঃ যদি প্রশ্ন করা হয় যে, এখানে বহুবচন অর্থাৎ আমরা ব্যবহার রহস্য কি? যদি এটা বহুবচনের জন্য হয় তবে উক্তি কারীতো একজনই। আর যদি সম্মান ও মর্যাদার জন্য হয় তাহলে এ স্থানের জন্য তা উপযুক্ত নয়। উত্তরঃ উক্ত প্রশ্নের উত্তর এই যে, একজন বান্দা যেন সমস্ত বান্দার পক্ষ থেকে সংবাদ দিচ্ছে, বিশেষ করে যখন সে জামা‘আতের সাথে সালাতে দাঁড়ায় এবং ইমাম নির্বাচিত হয়। তখন সে নিজের ও তার মু’মিন ভাইদের পক্ষ থেকে এমন ‘ইবাদতের স্বীকৃতি বা সংবাদ দিচ্ছে, যে ‘ইবাদতের জন্য তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে, আর সে তাদের পক্ষ থেকে কল্যাণের নিমিত্তে আগে বেড়েছে। কেউ কেউ বলেছেন এটা সম্মানের জন্য। যেন তার ‘ইবাদতে মগ্ন হওয়ার প্রেক্ষিতে তাকেই বলা হচ্ছে ‘তুমি ভদ্র, তোমার সম্মান আমার দরবারে খুবই বেশি। সুতরাং তুমি বলো, اِیَّاكَ نَعْبُدُ وَ اِیَّاكَ نَسْتَعِیْنُ ‘ আমরা শুধু তোমারই ‘ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।” এ কথা বলে নিজেকে সম্মানের সাথে স্বরণ করো। কিন্তু যখন তুমি ‘ইবাদত থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে তখন ‘আমরা’ এবং ‘আমরা করি না’ এ জাতিয় শব্দ ব্যবহার করবে না। যদিও তুমি হাজার হাজার বা লাখ লাখ লোকের মাঝে অবস্থান করো। কেননা সবাই মহান আল্লাহর নিকট মুখাপেক্ষী। কারো কারো মতে اِیَّاكَ نَعْبُدُ এর মধ্যে যতোটা বিনয় ও নম্রতার ভাব ফুটে উঠে তা إياك عبدنا এর মধ্যে ফুটে উঠে না। কেননা এর মধ্যে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ও ‘ইবাদতের উপযুক্ততা পাওয়া যায়। অথচ মহান আল্লাহর পূর্ণ ও যথার্থ ‘ইবাদত করতে কোন বান্দা কোন ক্রমেই সক্ষম নয়। যেমন কোন একজন কবির উক্তিঃ لَا تَدْعُنِيْ إِلَّا بِيَا عَبْدَهَا ... فَإِنَّهُ أَشْرَفُ أَسْمَائِيِ অর্থাৎ আমাকে তার দাস বলেই ডাকো, কেননা এটাই আমার সর্বোত্তম নাম। মহান আল্লাহ তাঁর নবীকে বলেছেন ‘দাস’ যেখানে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বড় বড় দানের কথা উল্লেখ করেছেন সেখানেই শুধু তিনি তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নাম عَبْد বা দাস নিয়েছেন। বড় বড় নি‘য়ামত যেমন কুর’আন মাজীদ অবতীর্ণ করা, সালাতে দাঁড়ানো, মি‘রাজ করানো ইত্যাদি। যেমন তিনি বলেনঃ ﴿اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِیْۤ اَنْزَلَ عَلٰى عَبْدِهِ الْكِتٰبَ﴾ সকল প্রশংসা মহান আল্লাহরই যিনি তাঁর দাসের প্রতি এই কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। (১৮ নং সূরাহ্ কাহফ, আয়াত নং ১) তিনি আরো বলেনঃ ﴿وَّ اَنَّهٗ لَمَّا قَامَ عَبْدُ اللّٰهِ یَدْعُوْهُ ﴾ আর এই যে, যখন মহান আল্লাহর বান্দা তাঁকে ডাকার জন্য দণ্ডায়মান হলো। (৭২ নং সূরাহ্ জ্বিন, আয়াত নং ১৯) অন্যত্র মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ ﴿سُبْحٰنَ الَّذِیْۤ اَسْرٰى بِعَبْدِهٖ لَیْلًا﴾ পবিত্র ও মহিমায় তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন। (১৭ নং সূরাহ্ ইসরাহ, আয়াত নং ১) বিপদাপদে মহান আল্লাহর কাছে সিজদাবনত হতে হবে মহান আল্লাহ পবিত্র কুর’আন মাজীদে এ শিক্ষা দিয়েছেনঃ ‘হে নবী! বিরুদ্ধবাদীদের অবিশ্বাসের ফলে যখন তোমার মন সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়ে তখন তুমি আমার ‘ইবাদতে লিপ্ত হয়ে যাও।’ তাই নির্দেশ হচ্ছেঃ ﴿وَلَقَدْ نَعْلَمُ اَنَّكَ یَضِیْقُ صَدْرُكَ بِمَا یَقُوْلُوْنَۙ۝۹۷ فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَ كُنْ مِّنَ السّٰجِدِیْنَۙ۝۹۸ وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتّٰى یَاْتِیَكَ الْیَقِیْنُ﴾ আমি তো জানি যে, তারা যা বলে তাতে তোমার অন্তর সঙ্কুচিত হয়। সুতরাং তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসা দ্বারা তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো এবং সাজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হও। আর তোমার মৃত্যু উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ‘ইবাদত করো। (১৫ নং সূরাহ্ হিজর, আয়াত নং ৯৭-৯৯) ইমাম রাযী (রহঃ) স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে কোন কোন লোক হতে বর্ণনা করেছেন যে, রিসালাত অপেক্ষা ‘উবূদীয়াতের মর্যাদা বেশি। কেননা ‘ইবাদতের সম্পর্ক সৃষ্ট বান্দা হতে সৃষ্টিকর্তার দিকে হয়ে থাকে। আর রিসালাতের সম্পর্ক হয় সৃষ্টিকর্তা থেকে সৃষ্টির দিকে। তাছাড়া মহান আল্লাহ বান্দার সমস্ত কল্যাণমূলক কাজের দায়িত্ব নেন। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উম্মাতের সৎ কার্যাবলীর অভিভাবক হয়ে থাকেন। (তাফসীরে কাবীর ১/২০২। হাদীস য‘ঈফ, যেমনটি মুসান্নিফ ইবনু কাসীর বলেছেন) তবে এ কথাটি সম্পূর্ণ ভুল এবং এ দুটোর দালীলই য‘ঈফ ও ভিত্তিহীন। বড়ই বিস্ময়কর বিষয় হলো, ইমাম রাযী (রহঃ) এটাকে য‘ঈফও বললেন আবার এর প্রতিবাদ করলেন না। কোন কোন সূফী বলেন যে, ‘ইবাদত করা হয় দু’টি কারণের কোন একটি কারণে। আর তা হলো হয়তো পুণ্য লাভ করা হবে অথবা শাস্তি প্রতিরোধ করা হবে। এটাও তাদের মতে য‘ঈফ। বরং ‘ইবাদতের সবচেয়ে উত্তম পন্থা এই যে, মানুষ সেই মহান সত্তার ‘ইবাদত করবে, যিনি সমুদয় গুণে গুণান্বিত। ‘ইবাদত করবে শুধু তার সত্তার জন্য এ ব্যতীত আর অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকবে না। এজন্যই সালাত সম্পাদনকারী ব্যক্তি সালাতে বলে, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সালাত পড়ছি। যদি তা পুণ্যলাভ ও শাস্তি হতে বাঁচার জন্য হয় তাহলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে। তবে অন্য দল এটা প্রতিবাদ করে বলেন যে, যে কোন ‘ইবাদত মহান আল্লাহর জন্য হওয়াটা প্রতিকুল নয়, যদিও তার বিনিময়ে সাওয়াব কামনা করা এবং শাস্তি থেকে বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যে করা হয়। যেমন একজন বেদুঈন লোক মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আবেদন করলেন যে, হে মহান আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! لَا أُحْسِنُ دَنْدَنَتَكَ وَلَا دَنْدَنَةَ مُعَاذٍ. فَقَالَ النَّبِىُّ (রাঃ) حَوْلَهَا نُدَنْدِنُ. ‘আমি আপনার মতো ও মু‘আয (রাঃ)-এর মতো পড়তে জানি না। আমি তো শুধু মহান আল্লাহর নিকট জান্নাত প্রার্থনা করি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমরাও তারই কাছাকাছি পড়তে থাকি।’ (আবূ দাউদ, ৭৫৭, ১/৭৯২, ইবনু মাজাহ, ১/৯১০, মুসনাদ আহমাদ ৩/৪৭৪, ৫/৭৪। হাদীসটি সহীহ)



সূত্র তাফসীর ইবনে কাসীর

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ